এম এ আশরাফ, ভোলা: ভোলার দৌলতখান উপজেলায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মেঘনা নদীতে পড়ে নিখোঁজ হওয়া নোমানের মুখমণ্ডল থেঁতলানো নাক ফাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রায় ৩ দিন পর ঘটনাস্থলে ভেসে উঠে। স্বজনরা তাঁর লাশ শনাক্ত করেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়
আজ রবিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয়রা পাতার খালের তীরবর্তীতে (ঘটনাস্থল) তাঁর ভাসমান লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
এদিকে নোমানের লাশ উদ্ধারের খবরে স্বজনদের আহাজারিতে ঘটনাস্থলে শোকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আহাজারির কন্ঠে স্বজনরা এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের কঠিন বিচারের দাবি জানাচ্ছেন।
নোমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার রাতে লালমোহন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহুরুল ইসলামকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ডিবি) এনায়েত হোসেন ও ভোলা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম কামরুল।
নিখোঁজের পর থেকে এ ঘটনায় ওসির গাড়ি চালক কনস্টেবল মো. রাসেল ও সজীব নামে দুই পুলিশ কনস্টেবলকে বরখাস্ত করে ভোলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। দৌলতখান থানা থেকে প্রত্যাহার করে ভোলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) স্বরূপ কান্তি পাল ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. সোহেল রানাকে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ২৪ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে দৌলতখান উপজেলার পাতার খাল মাছ ঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় নোমানসহ বেশ কয়েকজন জুয়া খেলছিল। এসময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবগত না করেই বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্য ও ক্লোজড হওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা নোমানদের জুয়ার আসরে গিয়ে তাদেরকে ধাওয়া করে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মেঘনা নদীতে নোমানসহ আরো কয়েকজন পড়ে যায়। তাদের মধ্যে সবাই সাঁতরে তীরে উঠে আসতে পারলেও নোমান উঠে আসতে পারেনি। এরপরই নিখোঁজ হয় নোমান। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নোমান নদীতে পড়ে যাওয়ার পর পুলিশ তাকে উদ্ধার না করে উপর থেকে তাকে লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। তাদের ধারণা পুলিশের ইটের আঘাতে নোমান নদী থেকে সাঁতরে তীরে উঠে আসতে পারেনি।
দৌলতখান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকির হোসেন লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। পরিবার নোমানের লাশ শনাক্ত করেছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। অপমৃত্যু মামলা রুজু রয়েছে। তবে বাদীর কোন অভিযোগ নেই। নদীতে ঝাঁপ দেয়ার সময় ব্লকে আঘাত পায়। পরবর্তীতে নদীতে ডুবে যায়। তথাপি সঠিক কারণ নির্ণয় করার জন্য ময়না তদন্তের লক্ষ্যে।