বারি উদ্ভাবিত বারি হাইব্রীড টমেটো-৮,১১ এর উৎপাদন প্রযুক্তির ওপর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ,কুষ্টিয়ার আয়োজনে বারি উদ্ভাবিত বারি হাইব্রীড টমেটো-৮ ও বারি হাইব্রীড টমেটো-১১ এর উৎপাদন প্রযুক্তির ওপর মাঠ দিবস বুধবার (১৬ নভেম্বর) কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাদালিয়া পাড়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর অভিযোজন পরীক্ষা, উৎপাদন ও কমিউনিটি বেস্ড পাইলট প্রোডাকশন প্রোগ্রাম’ শীর্ষক কর্মসূচীর অর্থায়নে এ মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.সায়েদুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ মাঠ দিবসের উদ্বোধন করেন। বারি’র মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মাঠ দিবসে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড.মো. শাহজাহান কবীর, বারি’র পরিচালক (ডাল গবেষণা কেন্দ্র) ড.মো.মহিউদ্দিন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বারি’র সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, গাজীপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.মো.মাজহারুল আনোয়ার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বারি’র সরেজমিন গবেষণা বিভাগ,গাজীপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ‘বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর অভিযোজন পরীক্ষা,উৎপাদন ও কমিউনিটি বেস্ড পাইলট প্রোডাকশন প্রোগ্রাম’ শীর্ষক কর্মসূচীর পরিচালক ড.মো. ফারুক হোসেন এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, কুষ্টিয়ার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জাহান আল মাহমুদ। মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রায় শতাধিক কৃষক অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব মো.সায়েদুল ইসলাম বলেন, আমরা গতানুগতিক কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করতে চাই। কৃষি হবে লাভজনক পেশা। আর এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তারা নতুন নতুন জাত আবিষ্কার করছে যেগুলো শুধু এক মৌসুমে না, সারা বছরই চাষ করা যায়। আপনারা জানেন, অমৌসুমে ফসলের দাম বেশি পাওয়া যায়। বারি উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটোর জাত ৮ ও ১১ এরকমই দুটি জাত। এই দুটি জাত চাষ করে কৃষক অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে। আশা করি আপনাদের মাধ্যমে এ দুটি জাতের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বলা হচ্ছে আগামী বছর পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ হবে। তবে আশা করি বাংলাদেশে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং আমরা অধিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যান্য দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশগুলোকে সাহায্য করতে চাই। অধিক কৃষি পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আমাদের দেশের কৃষিকে আরও লাভজনক পেশায় রূপান্তর করতে চাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বারি’র মহাপরিচালক ড.দেবাশীষ সরকার বলেন, ১৯৯৬ সালে এই বাঘারপাড়া উপজেলায় প্রথম গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষাবাদের সূচনা হয়। বর্তমানে এ অঞ্চলে প্রায় ৩১ হেক্টর জমিতে বারি উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটোর বিভিন্ন জাত তথা বারি হাইব্রিড টমেটো ৪, ৮ ও ১১ চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বারি হাইব্রিড টমেটো-৮ জাতটি একটি মেগা ভ্যারাইটি। কারণ সারা দেশে এ জাতটি ইতোমধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষিকে লাভজনক কৃষিতে রূপান্তরিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। একজন কৃষক প্রতি শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ৭ হাজার টাকা খরচ করে ১৬ হাজার টাকা আয় করছে। ফলে এ ফসলটি কৃষকের জন্য খুবই লাভজনক।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে বছরে ১৫ হাজার মেট্রিক টন গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদিত হচ্ছে। পাশাপাশি বাইরের দেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন টমেটো আমদানি করতে হচ্ছে। তাই দেশে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর উৎপাদন বাড়ানো গেলে কৃষকেরা যেমন লাভবান হবে একই সাথে আমাদের টমেটো আর আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। এ বছর আমরা বারি’র পক্ষ থেকে আমাদের নিজেদের উৎপাদিত হাইব্রিড টমেটোর বীজ কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করেছি এবং আগামীতেও আমরা কৃষকদেরকে গুণগত মানসম্পন্ন বীজ তুলে দিতে চাই। আর এ জন্য প্রয়োজনে আমরা বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করবো।