গজারি উজাড় করে উডলট ; দখল উচ্ছেদে ফরেস্টার-রেঞ্জারের নাটকীয়তা
মাহাবুর রহমান , গাজীপুর :: প্রাকৃতিক বন গজারি। বনের ভেতরে গর্ত করে গজারি পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে উজাড় করা হয়েছে সরকারি বন। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ফরেস্টার নোয়াব হোসেন সিকদার স্থানীয় একজনের জোত ভূমিতে চারা রোপন করে বনায়ন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে টেপিরবাড়ি এলাকায় দখল উচ্ছেদে নাটকীয় ভাংচুর দেখিয়ে ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণ করে উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দায় সাড়েন শ্রীপুর রেঞ্জারের দায়ীত্বে থাকা ফরেস্টার মীর বজলুর রহমান ও ফরেস্টার নোয়াব হোসেন সিকদার।
গত ৩১ জুলাই রোববার শ্রীপুর রেঞ্জাধীন সাতখামাইর বিটের অধিনে টেপিরবাড়ি এলাকার শতাধিক দখলের মধ্যে দু’একটি স্থাপনা পরিদর্শন করে ভাংচুরের নির্দেশ দিয়ে তদন্তের নামে আইওয়াশ করে চলে যান সহকারি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (এসিএফ) রেজাউল আলম। বাকি স্থাপনা ও গজারি বনে যাননি তিনি। এখনো প্রায় ৩০ টিরও বেশি নতুন স্থাপনার নির্মণ কাজ চলমান থাকলেও নজর নেই ওই গুলোর দিকে।
চলতি বছরের মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত তিন মাসে টেপিরবাড়ি সহ সাতখামাইর বিট এড়িয়ায় শতাধিক নতুন স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। ডিএফও নূরুল করিম আশ্বাস দিয়েও দখল বন্ধে এবং ফরেস্টার নোয়াব হোসেন সিকদার ও রেঞ্জার মীর বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে নেয়নি কোনো ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় , ফরেস্টার নোয়াবের যোগসাজশে সরকারি বনের গজারি পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করেন স্থানীয় কফিল উদ্দীন ও হাবিবুর। পরে গোপন বৈঠকে ফরেস্টার নোয়াব হোসেন লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টি রফাদফা করার চেষ্টা চালায় বাগান মালি মাসুমকে ( মঞ্জুরুল করিম) সাথে নিয়ে। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় তারা এখন সুর পাল্টে অন্য পথে হাটার চেষ্টা করছে বলে তথ্য রয়েছে।
এ বিষয়ে মীর বজলুর রহমানকে জানানো হলে সরেজমিন তদন্তে গজারি বনে গিয়ে নোয়াব হোসেন কে বলেন এটা তাড়াতাড়ি বাগান করেন , নয়তো বাচা যাবেনা। কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে সায়দিয়ে চলে যান তিনি।
শ্রীপুর রেঞ্জের দায়ীত্বে থাকা ফরেস্টার মীর বজলুর রহমান বলেন , গজারি বাগান জবর দখল উচ্ছেদ করে চারা লাগানো হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। এখানে কোনো গজারি গাছ ছিলো না। নতুন কোনো বড় মুতা নেই , কিছু কপিস ছিলো সে গুলো কাইটা চারা লাগানো হচ্ছে। ‘প্রাকৃতিক বন কেটে উডলট বনায়ন করা যায় বা বিদান আছে কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন , বন কেটে বাগান করার বিদান নেই। তবে গজারি বাগান সবটুকু আমাদের না , জোত আছে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন , এসিএফ সাহেব আসছিলেন তদন্তে। টেপিরবাড়ি এলাকায় অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। ‘কয়টি স্থাপনার বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন’? জানতে চাইলে বলেন , মামলা কয়টা দেওয়া হবে ওটা বিট অফিসার বলতে পারবে , আমি পারবো না।
সাতখামাইর বিট কর্মকর্তা নোয়াব হোসেন সিকদার বলেন, স্যারের নির্দেশে মামলা প্রক্রিয়াধীন। কয়টা মামলা প্রক্রিয়াধীন? এটা আপনাকে এখন বলা যাবে না , পর্যায়ক্রমে মামলা দেওয়া হবে , মামলা হইলেই জানতে পারবেন।
অভিযুক্ত এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গজারি বন কাটার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই , ওখানে বনায়ন করা হচ্ছে আর অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এবিষয়ে জানার জন্য দশবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে মোবাইলে রিং হলেও ফোন রিসিভ করেননি সহকারি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (এসিএফ) রেজাউল আলম।
স্থানীয় একজন বলেন, ফরেস্টার নোয়াব হোসেনের কথায় গজারি কেটে পুড়ানো হয়েছে , এখন বলছে মামলা দিবে , সাংবাদিক নিউজ করছে তাই। শুধু তায় নয় একজনের জোতের মধ্যেও চারা লাগিয়ে বাগান করা হয়েছে।
আব্দুর ছামাদ বলেন, আমার বাপদাদার আধা বিঘা জোত দখল করে বাগান করছে ফরেস্টার নোয়াব হোসেন সিকদার। জিজ্ঞেস করলে বলে ডিমারকেশন করার আবেদন করেন, জোত হলে চারা উঠিয়ে নেওয়া হবে।
একাধিক বন কর্মকর্তা বলেন , শ্রীপুরে গেজেট দখলে নিশ্চয় বিট কর্মকর্তা ও রেঞ্জার দায়ী। তারা সচেতন হলে দখল বন্ধ হওয়ার কথা। আর গজারি বন উজাড় করে বনায়নের কোনো সুযোগ নেই। সবই যদি আগের হয় তাহলে তারা কি ব্যবস্থা নিয়েছেন। অথচ প্রকাশিত নিউজে দেখা যাচ্ছে নতুন স্থাপনার চিত্র। মিডিয়ায় প্রকাশের পর কেনো ব্যবস্থা নিবেন , এতোদিন কি করেছেন। একজন দায়ীত্বশীল বিট কর্মকর্তা বা রেঞ্জারের মুখে এসব কথা মানায় না।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী নূরুল করিম বলেন , প্রাকৃতিক বন গজারি উজাড় করার কোনো সুযোগ নেই। এসিএফ রেজাউল আলম কে গেজেট দখল সহ সব জায়গায় যেতে বলা হয়েছে , উনি গেছেন প্রয়োজনে আবার যাবেন। ব্যবস্থা নেওয়া হবে , একটু সময় লাগবে। দেখবেন কি ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা। অবশ্যই ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
বন সংরক্ষক (সিএফ) হোসাইন নিষাদ বলেন, আমি নতুন মানুষ এখনো ফিল্ড ওয়ার্কিয়ে যাওয়া হয়নি। তবে জেনারেলি নির্দেশ দেওয়া আছে বনের গেজেট জবর দখলের সাথে কেউ সম্পৃক্ত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটা যেই হোক বিট অফিসার , রেঞ্জার , এসিএফ কিংবা ডিএফও যে কেউ হলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।