শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার।।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলছেন, গ্রাম আদালতের এখতিয়ার সম্পন্ন বিচার্য মামলাগুলো বিভিন্ন আদালত থেকে নিষ্পত্তির জন্য গ্রাম আদালতে পাঠানো হবে। গ্রাম আদালতগুলো আরো সক্রিয় করা হলে কক্সবাজারের আদালত সমুহে মামলার জট কিছুটা হলেও কমবে।
সততা, নিষ্ঠা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে গ্রাম আদালত ও লিগ্যাল এইড কমিটিকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।কক্সবাজার জেলার আওতাধীন উপজেলা ও ইউনিয়নসমুহে আইনগত সহয়তা প্রদান (লিগ্যাল এইড) কমিটি গঠন ও সক্রিয়করণ এবং গ্রাম আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার (২১মে) সকাল সাড়ে ১০ টায় কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল মনসুর সিদ্দিকী এবং জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি’র সঞ্চালনায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আরও বলেন, ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় সরকার পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি মেয়র-কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ভূমিকা অপরিসীম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আদালতে মামলার জট কমাতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। আইনশৃংখলা সুরক্ষা, এলাকার উন্নয়নে, উন্নত সমাজ বিনির্মানেও তাঁদের অবদান অপরিসীম।
জেলা আইনগত সহয়তা প্রদান কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল আরও বলেন, গ্রাম আদালত বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের বিচারের আর্থিক ক্ষমতা মাত্র ৭৫ হাজার টাকা। এই আর্থিক ক্ষমতা বাস্তবতার তুলনায় খুবই কম। দেশ উন্নত হয়েছে। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায়, সবকিছুর মূল্য বাড়ায় গ্রাম আদালত এর বিচারের আর্থিক ক্ষমতা ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকায় উন্নীত করার জন্য এবং গ্রাম আদালতে লোকবল বাড়ানোর জন্য সমন্বয় সভা থেকে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল জনপ্রতিনিধিদের আশ্বস্থ করেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজার বিচার বিভাগে ৮০ হাজারেরও বেশি মামলা রয়েছে। তার মাঝে এক হাজারেরও বেশি হত্যা মামলা রয়েছে। ২০ হাজারের বেশি মাদক মামলা রয়েছে। এসব মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজারে আরো অতিরিক্ত ৪ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের পদ সৃজন করায় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী, আইনসচিব, স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সন্তোষ প্রকাশ করে আরো বলেন, জেলার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মাদকের সাথে সম্পৃক্ততার কোন অভিযোগ নাই। তবে কিছু কিছু মেম্বারদের বিরুদ্ধে মাদকের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। কক্সবাজারে এখন বিভিন্ন ধাপের বিচার প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞ বিচারকদের নিয়ে টাউট বাটপারেরা প্রতারণা করছে। এ বিষয়টা সকলকে সম্মিলিতভাবে সচেতন ও দায়িত্বের সাথে মোকাবেলা করার অনুরোধ জানান তিনি।
অন্যদিকে, বিচারক, প্রশাসক ও রাজনীতিবিদ। তাঁরা সহজে যেটা পারেন, বিচারকেরা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে সেটা পারেন না। তাই জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের এখতিয়ারভুক্ত মামলা সমুহ নিষ্পত্তির পাশাপাশি এখতিয়ার বহির্ভুত বিরোধও আনঅফিসিয়ালী সহজে নিষ্পত্তি ও আদালতে সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা পাঠাতে পারেন। এতে আদালতের কার্যক্রম সহজ ও সাবলীল হবে এবং মামলার জট কিছুটা হলেও কমবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-১ মাহমুদুল হাসান, সিনিয়র সহকারী জজ সুশান্ত প্রসাদ চাকমা, জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসীর বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার, টেকনাফ পৌরসভা মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলাম, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আলম, স্পেশাল পিপি এডভোকেট বদিউল আলম, এডভোকেট একরামুল হুদা, জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীবৃন্দ, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটরবৃন্দ, চকরিয়া পুর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফারজানা আফরিন মুন্নাসহ জেলার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ।
এদিকে, সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন, সহকারী জজ আবদুল মান্নান এবং ত্রিপিটক পাঠ করেন, যুগ্ম জেলা জজ আদালত-১ এর বেঞ্চ সহকারী সেতু বড়ুয়া।