দোদুল্যমান রাজার দূরদর্শিতা
হাসনা আবেদীন
(পূর্ব প্রকাশের পর)
রাজা বুঝে ফেলেছিনে যে, প্রজাদের মধ্যে সৌহার্দের আবির্ভাব ঘটাতে হলে আগে নিজের মধ্যে পরিবর্তন এর হাওয়া লাগাতে হবে। নইলে যে লোকে বলবে ধর্মের কথা বলে, নিজেইতো ধর্ম মানেনা। তাই তিনি নিজেকে সেভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করেছেন।
সে বহু বছর খানেক আগের কথা, কালে কালে মেলা বেলাও হয়েছে বটে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।(যেমনটি অপেক্ষা প্রিয়জন আশার) তিনি নিজেরএবং রাজ্যের সুদিন ফিরিয়ে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু তিনি নিজেকে নিয়ে সদা বিচলিত থাকতেন। কারন উনি ভাবতেন, উনি আদো কি পারবেন এই বিপর্যয়ে সবার পরিবর্তন আনতে। রাজ্যের পরিবর্তন আনতে।
সর্বপ্রথম উনি যা করলেন তা হলো, নিজ পরিচয় গোপন রেখে তিনি আপামর সকল রাজ্যের সকল প্রজাদের সাথে মিশতে শুরু করলেন। (কেননা একটা রাজ্যের “প্রাণ” হচ্ছে তার প্রজারা)। প্রজাশূণ্য রাজ্য তো আর মানুষের হতে পারেনা, তাইনা। তাই নিজে সাধারণ মানুষের বেশ ধরে প্রজাদের সকল অভিযোগ, অভিমান ইত্যাদি সকল বিষয় ধারণা নিতেন। আর প্রজারাও তাদের দলের লোক ভেবে, রাজাকে তাদের মনের সকল দুঃখ কষ্ট খুলে বলতেন।
এতে তিনি বুঝতেন, জানতেন আসলে সকল বিষয়ের শাসন বা কার্যক্রম এক নয়। ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে সেগুলা মোকাবিলা করা লাগে। নিজের জ্ঞানার্জন এ বণিকদের সাথে বাণিজ্য করতেও শুরু করেছিলো, কিন্তু সেখানে তার ফলাফল তেমন ভালো হয়নি। তাই নিজ শাসনকর্মকেই প্রাধান্য দিলেন।
গ্রন্থ গত বিদ্যা যদি কাজে না লাগে, তাহলে এমন বিদ্যা ভাগাড় এর সমতুল্য। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক এমন অনেক বিষয় ছিলো যা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ নহে। এর জন্য দরকার অভিজ্ঞতা, প্রচুর অভিজ্ঞতা। তিনি চাচ্ছিলেন এই অভিজ্ঞতার মূলমন্ত্র শিখে ফেলতে। যা পরবর্তীতে উনি সক্ষম ও হয়েছেন।
কিন্তু এত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আর দূরদর্শী মনোভাব থাকা সত্ত্বেও ব্যর্থতার মালা গলায় পড়েন তিনি। কেননা মীরজাফরা আসলে যুগে যুগে যে তাদের বংশধর রুপে গিয়েছিলো তা কি আর বলতে। বিশ্বাসঘাতক ক্যন্সার রোগের মতোই, এরা সুপ্ত অবস্থা বিরাজ করে। কিন্তু যখন উগড়ে উঠে, ততক্ষণে সব শেষ।
তার সকল কাজকর্ম ও ভালোবাসা দিয়ে তিনি তার শাসনকার্যে বিন্দুমাত্র অবহেলা করেন নি। তাই বোধহয় এর উত্তম ন্যায় তিনি তার সৃষ্টিকর্তা থেকে পাবেন।
চলবে….
চমৎকারআপু
চমৎকার