শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার।।
প্যাডেলে ক্রমান্বয়ে পা ঘুরালেই মাটি স্পর্শ করে বাতাসের ঠিক মাঝখান দিয়ে ছুটে যায় বাইসাইকেল। চারপাশের নানা দৃশ্যপট তখন চোখের সীমারেখায় এসে হৃদয়ের মাঝে ভালোলাগার পাপড়ি ছড়ায়। হারিয়ে যাবার নেই মানা-এ কথাটি মর্মে মর্মে অনুভূত হতেই দ্বিচক্রযানে ছুটে বেড়ানোর আনন্দ তাদেরই।
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ‘ঈদ ভ্রমণে’ আসেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ১০ সদস্যের একটি সাইক্লিং দল। ঈদ ছুটির লং রাইডের অংশ হিসেবে তারা কুতুবদিয়া বেছে নিয়েছে। এই লক্ষে
শুক্রবার সকাল ৭ টায় হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করেন।
দলের সদস্যরা হলেন, মোহাম্মদ তারেক, মোহাম্মদ জিহান, মোহাম্মদ আরমান, রুদ্র ইমু, মোহাম্মদ শায়খ নাহিয়ান, সৌকত, নিশান, মোহাম্মদ আরিফ, মোহাম্মদ তানবীর ও মোহাম্মদ রায়হান। তারা সকলে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (৬মে) বিকাল সাড়ে ৪ টায় ১০ সদস্যের এই সাইক্লিং দল কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ জেটিঘাটে পৌঁছে তাদের যাত্রা শুরু করে এবং রাত ৯ টার মধ্যে কুতুবদিয়া ভ্রমণ শেষ করেন।
বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করা এই সাইক্লিং গ্রুপের সদস্য মোহাম্মদ আরমান
বলেন, কুতুবদিয়া যেতে সরাসরি কোন সড়কপথ বা রাস্তা নেই। সাগরপথে পাড়ি দিতে হয়, যা খুবই ঝুঁকিপুর্ণ। অন্ততঃ বর্ষাকালে শীপ বা ফেরির ব্যবস্থা করলে দ্বীপবাসীর দুংখ অনেকটা লাঘব হবে।এছাড়াও, কুতুবদিয়ায় ভ্রমণের সময় আমরা দেখলাম কয়েকটি স্থানে রাস্তার দু’পাশে গাছ নেই। এতে গাছ লাগালে পরিবেশ নির্মল হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। কুতুবদিয়া দ্বীপের পুর্বপাশে আরো বাইনগাছ এবং পশ্চিম পাশে সৈকতে আরো ঝাউগাছ লাগালে এই দ্বীপ বিলীন হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
টিম লিডার মোহাম্মদ তারেক বলেন,
দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া সম্পর্কে জানতে আমাদের ভ্রমণ। খুবই নির্মল পরিবেশ। সাধারণ জীবনযাপন মানুষের। বেশির ভাগ লোক শিক্ষিত। তারা অতিথি পরায়নও। বেড়িবাঁধ ও বিদ্যুৎ হলেই এখানকার মানুষের আর কিছু অভাব নেই। লবণের মাঠ, ধান চাষ ও মাছ ধরা দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা। সরাসরি মাঠ থেকে লবণ উৎপাদন পদ্ধতি চোখে দেখেছি। সাগর থেকে ধরে আনা একদম তরতাজা মাছ খায় কুতুবদিয়ার মানুষ।
টিম লিডার মোহাম্মদ তারেক বলেন, নিয়মিত সাইক্লিংকে প্রমোট করাই আমাদের উদ্দেশ্য। বাইসাইকেল মানুষের জন্য একটি মূল্যবান বাহন। রেগুলার লাইফে বাইসাইকেল নিয়ে অফিসে যাওয়া-আসার ফলে সময় কম লাগবে এবং এখানে শারীরিক সুস্থতার বিষয়টিও রয়েছে। সাইকেল ভ্রমণ সেফটির ব্যাপারটি রয়েছে। সুরক্ষার জন্য হেলমেট, গ্লাভস ইত্যাদি পরে সাইকেল চালানোর অভ্যাস গড়ে তোলা। সাইক্লিংকে প্রমোট করা এবং শহরের সীমাহীন যানজট থেকে রক্ষাসহ নানাবিধ সুবিধার কথা চিন্তা করে তৈরি হয় এই গ্রুপটি। এই গ্রুপে আছেন অনেক মডারেটর, এক্টিভিস্টস ও সদস্য।
এদিকে, চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে আসা তরুণ সাইক্লিং দলকে উৎসাহিত করতে বেলাভূমি রেস্তোরাঁয় পাশে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেন, কুতুবদিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো.শাহাদত হোছাইন ও কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজবাহুর রহমান তুহিন।
মিজবাহুর রহমান তুহিন বলেন, দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া একটি অন্যতম পর্যটক স্পট। এটা ঠিকভাবে প্রচার করতে পারলে পর্যটকরা ভ্রমণে আসতেন। উপজেলা প্রশাসন চাইলে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে পারে। থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতের তেমন সুবিধা না থাকায় পর্যটকরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না। কুতুবদিয়ার পর্যটনকে তুলে ধরতে সাইক্লিং দলের মতো আরো ভ্রমণ টীমকে কুতুবদিয়ায় আমন্ত্রণ জানানো দরকার।