শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার।।
করোনা ভাইরাস গত কয়েকটি বছর মানুষের জীবনের স্বপ্ন ও পরিকল্পনার অনেক কিছুই চুরমার করে দিয়েছিল। অনেক মানুষ চিরকালের জন্য তার প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। অনেক মানুষ প্রিয়জনের সাহচার্য ছাড়া নিঃসঙ্গ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা মহামারীর ধাক্কা সামাল দিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আবার ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য।

ঈদুল ফিতরের ছুটিতে লাখো পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নগরী কক্সবাজার। ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে এবার পর্যটকের ভিড়ও বেশি।
ঈদের দিন মঙ্গলবার কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাখো পর্যটক জড়ো হয়েছেন। বুধবার থেকে পর্যটকের সংখ্যা আরও বেড়েছে। এবার ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে ১০ লাখ পর্যটক আসবেন বলে পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
৮ মে শনিবার পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় থাকবে কক্সবাজারে। মূলত ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকের আনাগোনা বাড়তে থাকে। সৈকতের ১১টি পয়েন্টসহ হিমছড়ি, ইনানী, রামু, মহেশখালী ও আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণ করছেন পর্যটকরা।
বিপুল সংখ্যক এই পর্যটকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরার করেছে কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
রেজাউল করিম আরও বলেন, পর্যটকদের তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ৬টি ট্যুরিস্ট হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি হেল্প ডেস্কে ফাস্ট এইড বক্স সরবরাহের মাধ্যমে পর্যটকদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সমুদ্র সৈকত এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ১টি ওয়াচ টাওয়ার এবং ৭টি পর্যবেক্ষণ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়া সমুদ্র সৈকতে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের দ্রুত উদ্ধারপূর্বক অভিভাবকদের নিকট হস্তান্তরের লক্ষ্যে চাইল্ড সাপোর্ট সেন্টার এবং পর্যটকদের হারিয়ে যাওয়া মোবাইল, মানিব্যাগ বা অন্যান্য মালামাল উদ্ধারপূর্বক প্রকৃত মালিকের নিকট হস্তান্তরের লক্ষ্যে প্রত্যেকটি হেল্প ডেস্কে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হয়ে গত ৩০ এপ্রিল থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়। তবে ঈদের দিন থেকে পুরোদমে পর্যটক আসা শুরু হয়েছে কক্সবাজারে।
এ কয়দিনে এখানকার প্রায় সাড়ে ৪০০ হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউস শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, সরকারী ছুটিসহ আটদিনে কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
গাজীপুর থেকে আসা মোজাম্মেল হক বলেন, সাগরের প্রতি আমার টান দীর্ঘদিনের। তাই ছুটি পেলেই কক্সবাজার সাগর দর্শনে ছুটে আসি। এবার ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। ভালো সময় কাটবে আশা করি।
সিলেট থেকে আসা ঝলক চৌধুরী দম্পতি বলেন, সারা বছরই ব্যস্ততার মধ্যে সময় চলে যায়। ছুটি পেলেই একটু ঘোরাঘুরি করার সুযোগ হয়। আর কক্সবাজার তো অসাধারণ একটা পর্যটন স্পট। এখানে এলেই মনটা ভালো হয়ে যায়।
কক্সবাজার ঘুরতে আসা পর্যটক সনি, রনি ও মিলি বলেন, ঈদের টানা ছুটিতে কক্সবাজার এসে খুব ভালো লাগছে। বৃষ্টি আর সাগর আমাদের একাকার করে দিচ্ছে। ঈদকে খুব উপভোগ করছি আমরা।
চার কিলোমিটার সৈকতে বসানো হয়েছে এক হাজারের বেশি চেয়ার-ছাতার কিটকট। প্রতিটি কিটকটে বসে আসেন দুই থেকে চারজন। সবার দৃষ্টি সমুদ্রের দিকে। পর্যটকদের কেউ ঘোড়ার পিঠে উঠে ছুটছেন সৈকতের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। বিচ বাইকে চড়েও কেউ কেউ এদিক-ওদিক ছুটছেন।
মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর সৈকতে প্যারাসেইলিং করছে ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিং নামের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ ফরিদ বলেন, ঈদের দিন থেকে বিপুল পর্যটক প্যারাসেইলিং করেছেন। দিনদিন পর্যটকের আগমন বাড়ছে। টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা। ২ হাজার টাকার টিকিট দিয়ে আকাশের উড়তে পারবেন সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। আর ২ হাজার ৫০০ টাকার টিকিটে আকাশে উড়ার পাশাপাশি সমুদ্রের লোনাজলে দুইবার পা ভেজানোর সুযোগ পান পর্যটকেরা, জানান এই ফরিদ।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেষ্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, এখানকার চার শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসে সোয়া লক্ষাধিক মানুষের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি । আশা করি, পর্যটকরা ভ্রমণের ভালো স্মৃতি নিয়ে ফিরবেন।

কক্সবাজার তারকামানের হোটেল দি কক্সটুডের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আবু তালেব বলেন, পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দদায়ক করতে হোটেলগুলোতে নানা আয়োজন রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে শুধু কক্সবাজার সৈকত নয়, আশপাশের হিমছড়ি, ইনানী, মেরিন ড্রাইভরোডসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামলানোর পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে হোটে মোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে পোশাকধারী
পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও নিরাপত্তার নিয়োজিত রয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক টীম।