সাইপ্রাসে ঈদুল ফিতর উদযাপন
সাইপ্রাস থেকে মুস্তাফিজুর রহমান হিমেলঃ ঈদ মানেই সুখ, ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই অনাবিল ভালবাসা। কিন্তু প্রবাসীদের জন্য ঈদ মানে বেদনা, ঈদ মানে যন্ত্রণা, ঈদ মানে প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার আকুতি। ঈদ মানে মনে শত কষ্ট নিয়েও বলা, “হ্যা, আমি ভাল আছি।”
সাইপ্রাস আসলাম দুই বছর হল মাত্র। এই অল্প দিনেই বুঝে গেলাম- প্রবাস মানে কী? আসার ৩ মাস পর জীবনের প্রথম প্রবাসে ঈদ করলাম। সেইবার কর্মব্যস্ত জীবনে হুট করে ৩০টা রোজা কোনদিকে শেষ হয়ে গেল, টেরই পেলাম না। ঈদের আগের দিন রাতে জানতে পারলাম, আগামীকাল ঈদ।
নর্থ সাইপ্রাস মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় এবং আরও কিছু কারণবশত এইখানে মুসলমানদের ধর্মীয়ভাবে সরকারি বন্ধ থাকে। নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে রোববার বন্ধ এখানে। কিন্তু আমি একটা দোকানে চাকরি করি সেই সুবাদে রবিবার ও আমার কাজ থাকে। কাজের প্রেসারে ঈদের কথা ভূলেই গেছিলাম। তাই ঈদের কোন আমেজ তো দূরের কথা, কাল যে ঈদ, সেটাও জানতাম না।
যাই হোক, রাতে যখন জানতে পারলাম আগামীকাল ঈদ হবে, তখন কয়েকজনকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- ঈদের নামাজ কয়টায়? ঈদের নামাজ ছিল ৬.৩০ টায়। নতুন কাপড়ে ঈদের নামাজ আদায় করলাম বরাবরের মতই সবাই একসাথে ছবি উঠালাম। নামাজ পড়তে না পড়তে কোনদিকে ৮টা বেজে গেল, কে জানে?
বাসায় আসলাম সবাই একসাথে বেশ আনন্দেই কাটে আমাদের ঈদ, একজন সেমাই রান্না করল, গতকাল আমাদের কে এক বন্ধু কেক, মিস্টি আরো অনেক কিছু কিনে দিয়েছিল।
হায় রে, বিদেশ জীবন তাদেরকে কীভাবে বুঝাই। এটা যে বিদেশ, এখানে এসব নাই। চোখের পানি কিছুতেই আটকানো যাচ্ছিল না। একদিকে কাজ করি, অন্যদিকে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। দেশের সেই ঈদের আনন্দের দিনগুলি বারবার মনে পড়ছে। তখন ঈদের জন্য কতো কিছু বাজেট করতাম। এত টাকা দিয়ে শপিং করব,ওখানে-সেখানে যাব, ওইখানে এটা খাব! এইরকম আরও কতো শত পরিকল্পনা করতাম, তার কোন শেষ নাই।
যখন ঈদের দিন নামাজ পড়ে বেড়াতে বের হতাম, তখন কতো আপ্যায়ন সবার ঘরে ঘরে। এ বলে এটা খাও, ও বলে সেটা খাও! না, আজকে তোমাকে এটা খেতেই হবে। কতো যায়গায় এই রকম জোর করে করে খাইয়েছে, কিন্তু আজ প্রবাস জীবনে এটুকুও কেউ বলে না- “সেমাই খাও।”
যাই হোক, সেইবার কোন রকম দুঃখ-বেদনায় কাটিয়ে দিলাম ঈদের আমেজ। চিন্তা করলাম, আগামী বছরের ঈদ বেশ জাঁকজমকভাবে পালন করব। কিন্তু যখন পরের বার আবার ঈদ আসলো, ঈদ করার আগ্রহ অনেক কমে গেল। আস্তে আস্তে যখন বুঝতে পারলাম, এইখানে শুধু আমি না, সবারই একই অবস্থা, তখন নিজের কষ্টটা অনেক হালকা হয়ে গেল। সবাই যেখানে দুঃখী, সেখানে আমিও তাদের দুঃখে দুঃখী হয়ে সুখী হই। এইভাবে কেটে গেল দ্বিতীয় ঈদ।
এইবার আবার হুট করে বছর না ঘুরতেই কোনদিকে ঈদ চলে আসল। আহারে ঈদ, কোথায় গেল ঈদের শপিং? কোথায় গেল ঈদের সেমাই? ঈদের আমেজ তো দূরের কথা, এখন কেউ ঈদের কথা বললেই মনে হয় যেন টিটকারি মারতেছে।
জানি না, এভাবে প্রিয়জন হারা জীবন থেকে আরও কত ঈদ চলে যাবে? তবে ভাল থাকুক আমার মত প্রিয়জনবিহীন সারা বিশ্বের সকল প্রবাসীরা, ভাল কাটুক দেশের সকল প্রিয়জনদের ঈদ। এই প্রত্যাশাই রইল সবার প্রতি। জীবন সংগ্রামে যে যেই অবস্থাতেই থাকেন না কেন উপভোগ করেই যেতে হবে।