অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ৪০০ বছরের পুরনো মসজিদ।
সরকারি তদারকির অভাবে নষ্ট হতে চলেছে ৪০০ বছরের পুরনো শাহ সুজা, বাদশা আলমগীর ও মটকা মসজিদ। বাদশা আলমগীর ও শাহ সুজার নামানুসারে ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোর নামকরণ করা হয়েছিল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদগুলোর সংস্কারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেগুলোর দায়িত্ব নেওয়া হয়নি। ফলে সৌন্দর্য হারাতে বসেছে মসজিদগুলো।
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের অলিপুরে দুটি মসজিদ শাহ সুজা, বাদশা আলমগীর ও পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমুড়া দক্ষিণ পাড়া বড়বাড়ির মটকা মসজিদের অবস্থান। আলিপুরের মসজিদ দুটির মাঝামাঝির স্থানে শায়িত রয়েছেন চারজন আউলিয়া। ওই এলাকায় আউলিয়াদের উপস্থিত অনেক বেশি ছিল বলে গ্রামটির নামকরণ করা হয় অলিপুর।
জানা যায়,মসজিদগুলো মোঘল শানসামলের। এর একটি মসজিদের প্রধান ফটকের ওপর ফরাসি ভাষায় ১৬৫০ সাল খোদাই করা রয়েছে। ইতিহাস ঐতিহ্য জেলা তথ্য বাতায়নে মসজিদ তিনটির মধ্যে দুটির নাম রয়েছে। অলিপুর গ্রামের চৌধুরী বাড়ির সামনে অবস্থিত মসজিদ দুটির গায়ে ফার্সি ভাষায় বাদশাহ আওরঙ্গজেবের নাম উল্লেখ রয়েছে। একটি মসজিদ থেকে আরেকটি মসজিদের দূরত্ব প্রায় ৫০০ গজ।
বাদশা আলমগীর মসজিদের গম্বুজ সংখ্যা ৫। মসজিদটির মূল স্থাপনা চারটি পিলারের উপর দাঁড়ানো থাকলেও প্রতিটি গম্বুজে চারটি করে পিলার রয়েছে। আর প্রতিটি দেয়ালে উচ্চতা প্রায় ১৬ ফুট। শাহ সুজা মসজিদ তিনটি গম্বুজের উপর দাঁড়ানো। মাঝখানের মূল অংশে বড় ধরনের একটি গম্বুজ আর তার দুই পাশে ছোট দুটি গম্বুজ রয়েছে। এ মসজিদে এক সঙ্গে শতাধিক মুসল্লি নামাজ পড়তে পারে। আর এর দেয়ালের উচ্চতা প্রায় ১৬ ফুট।
এলাকার মুসল্লিরা জানান, গত ১৯৯৮ সালে বাদশাহ আলমগীর মসজিদটি সরকারিভাবে মেরামত করা হলেও এরপর আর কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা মেলেনি। তাই বর্তমানে মসজিদগুলোর আগেরকার কারুশিল্পগুলো অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে অলিপুরের শাহ সুজা ও রান্ধুনীমুড়ার মটকা মসজিদে আসা মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এর সামনের দিকে বারান্দা করার কারণে মসজিদগুলোর আগের দৃশ্য অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে মূল মসজিদগুলো আগের আকৃতিতেই রয়েছে। মসজিদের গায়ে আনারস, ফুলসহ বিভিন্ন চিত্র খচিত কারুকাজ ছিল। এখন একটু বৃষ্টি হলে দেয়াল ভিজে উঠে আর স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যায়। শাহ সুজা মসজিদ ব্যতীত অন্য দুই মসজিদের সব ব্যয়ভার স্থানীয় মুসল্লিরা বহন করছেন।
মসজিদগুলোর তথ্য সম্পর্কে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না বলে জানান। হাজীগঞ্জ পৌরমেয়র আ স ম মাহবুবউল আলম লিপন জানান, “আমি ১২নং ওয়ার্ডের রান্ধুনীমুড়া মটকা মসজিদে আমার সাধ্যমতো সহযোগিতা করছি। সরকারি বড় ধরনের কোনো সহযোগিতা পেলে মসজিদটি আগের আকৃতিতে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।”