বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা।।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া নলবিলা চেকপোস্টে পেরিয়ে প্রতিদিন অবাধে পাচার হচ্ছে বনের গাছ, ফার্নিচার ও চিরাই কাঠ । এ নিয়ে কোন ভূমিকা নেই বনবিভাগের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন মাসোহারা পেয়ে নিরব রয়েছে বনবিভাগ। এতে জড়িত রয়েছেন খোদ নলবিলা নলবিলা বিট কাম চেক ষ্টেশন কর্মকর্তা অবনি কুমার রায়।
অবশ্য তিনি দাবী করেছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বেঁধে দেওয়া মাসিক চাঁদা জোগান দিতেই যত সব অনিয়ম করা হচ্ছে।
জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়া খালী রেঞ্জের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের চকরিয়া নলবিলা বনবিট কাম চেক স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন অবাধে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারি কাঠ। নলবি বনবিট কাম চেক স্টেশনে অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রতিরাতেই পাচার হচ্ছে কাঠ। কাঠ পাচারে দৈনিক এক থেকে দেড় লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হয়। অভিযোগ আছে মাসোহারা পেয়ে চুপ থাকছে বনবিভাগ। এতে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, কেরানী হাট, চুনতি, লামা আলী কদম ও কক্সবাজার জেলার বিশাল বনভূমি দিনে দিনে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে।
সরেজমিন পরিদর্শন ও সংশ্লিষটদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বনবিভাগ এবং স্থানীয় কাঠচোর সিন্ডিকেটের দ্বিপক্ষীয় যোগসাজশে ব্যাপক পরিমাণ কাঠ পাচার হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহা সড়কের নলবিলা চেক স্টেশন দিয়ে। ফলে অবাধে বৃক্ষ নিধনে পরিবেশের ভারসাম্য নিয়েও শংকা দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বনাঞ্চলগুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অন্যতম প্রধান ধরন হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হতে অবৈধভাবে কাঠ সংগ্রহ ও পাচার। এর ফলে বনাঞ্চল একদিকে যেমন বন উজাড় হচ্ছে, তেমনি সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । কক্সবাজারের বনাঞ্চলগুলো কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বিরান ভুমিতে পরিণত করেছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
এদিকে, আজিজ নগর, আধুনগর, চুনতি, হারবাং, ফাইতং থেকে কাঠ চকরিয়া ডুকে নলবিলা চেক অতিক্রম করে। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, পদুয়া, সাতকানিয়া, কেরানী হাট আধুনগর থেকে চোরাই কাঠ, ফার্নিচার ও চিরাই কাঠ ভর্তি কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, ট্রাক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাচ্ছে নলবিলা চেক স্টেশন পেরিয়ে। মাঝে মধ্যে কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগের বনকর্মীরা অভিযান চালিয়ে চোরাই কাঠ ভর্তি ট্রাক, পিকআপ আটক করলেও সিংহভাগ কাঠ আত্মসাত ও মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে পরে আটক গাড়ী ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে।
নলবিলা চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিনই ভ্যানগাড়ি পিকআপ, ট্রাক এমনকি যাত্রীবাহী বাসে বহন করেও হাজার হাজার টাকার মূল্যবান সেগুন কাঠ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি ছাড়া চেকপোস্ট অতিক্রম করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে তাদের নির্ধারিত উৎকোচ না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঠবাহী গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখে। পরে স্টেশন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাহিদা মাফিক টাকা দিয়ে স্টেশন অতিক্রম করতে হয়। প্রতিদিন নলবিলা চেক পোস্টর বন কর্মচারীরা এভাবেই লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। আবার সন্ধ্যার পর যেসব অবৈধ সেগুন কাঠভর্তি ট্রাক আসে সেগুলোর চাঁদার অংক দ্বিগুণ। এসব গাড়িকে নলবিলা চেকপোস্ট অতিক্রম করতে ডিউটিরত বন কর্মকর্তাদের
বাণিজ্য চুক্তির গাছ ভর্তি প্রতি ট্রাক ১ হাজার টাকা, লামা আলী কদমের টিপির কাঠ ভর্তি প্রতি ট্রাক থেকে ৪০০০ টাকা, কক্সবাজার জেলা থেকে টিপির কাঠ ভর্তি প্রতি গাড়ী থেকে ৩০০০ টাকা। চলাচল পাস টিপি চেকিং এর নামে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে টাকাগুলো আদায় করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে টিপির বাইরে অতিরিক্ত অবৈধ কাঠ পাচারও হচ্ছে।
এভাবে দৈনিক ১-২ লাখ টাকার মতো চাঁদাবাজি হচ্ছে নলবিলা বিট কাম চেক স্টেশনে। অথচ অবৈধ কাঠ পাচার রোধে নলবিলা চেক স্টেশন বসানো হলেও চেক স্টেশন পাচার রোধের পরিবর্তে কাঠ পাচারের সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ।