সিডনি একুশে বই মেলা।
রিপোর্ট: মোশারফ হোসেন নির্জন/অস্ট্রেলিয়া:
করোনায় গত দুবছর বই মেলা স্থগিত থাকলেও এবছর আর থেমে থাকেনি। করোনায় নিজেদের মানিয়ে নিয়ে দিব্যি একুশে বই মেলার আয়োজন করে একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া। সাড়াও মেলে বেশ, আয়োজক, লেখক, পাঠকের এক মিলন মেলা ঘটে। যদিও বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা কিছুটা ভুগিয়েছে মেলায় অংশ গ্রহনকারীদের।
রোববার, ২০শে মার্চ অস্ট্রেলিয়ার ব্যস্ততম শহর সিডনির এশফিল্ডে অনুষ্ঠিত হয় একুশে বই মেলা। শহরটির ২৩তম বই মেলা সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৬টা পর্যন্ত গড়ায়। দেশ থেকে গুনী লেখকদের বই আমদানি করা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরের লেখকদের বই ঠাঁই করে নেয় মেলাটিতে।
উৎসুক দর্শনার্থীদের জন্য বইয়ের সমাহার রাখার পাশাপাশি বর্ণাঢ্য আয়োজন রাখতে কার্পন্যতা করেননি আয়োজকরা। সকাল ৯টায় প্রভাতফেরির আয়োজন করে একুশে একাডেমী। সাদা কালো অবয়বে অংশ নেন বিভিন্ন সংগঠন, আয়োজকবৃন্দ ও দর্শনার্থীরা।
সংগীত, নৃত্যসহ আরো বেশকিছু সাংস্কৃতিক আয়োজনের সাবলীল সমন্বয়ও রাখা হয়। আরো রাখা হয় কবিতা, মঞ্চ নাটক, দলীয় পরিবেশনা, চিত্র প্রদর্শনী, ফটোগ্রাফী প্রদর্শনী। উপস্থিতিদের নজর কাড়ে মঞ্চ নাটকটি। হুমায়ন আহমেদের স্বপ্নবিলাস নাটকটি মঞ্চস্থ করেন প্রবাসী নাট্য সংগঠন সখের থিয়েটার। নাটকটির নির্দেশনায় শাহীন শাহনেওয়াজ এবং অভিনয়ে আফসানা রুচি ও শাহীন শাহনেওয়াজ অংশ নেন।
শাহীন শাহনেওয়াজ জানান, ‘প্রবাসে আমাদের ভাষা, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চা আগামী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই প্রয়াস।’
মেলায় আগত দর্শনার্থীদের একজন জানান, গত দুবছর মেলা হয়নি। তাই এবার আগ্রহ ভরে অনেকেই এসেছে। আমি বেশ কিছু বই সংগ্রহ করেছি। বই কেনাটা দায়িত্ব মনে করি। আমরা বই না কিনলে মেলাটা জৌলুসতা হারাবে।
মূলত সিডনিতে বাংলাদেশী কমিউনিটি বড় হওয়ায় প্রতিবছর এখানেই মেলাটির আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। মেলা প্রাঙ্গনেই আছে শহীদ স্মৃতি মনুমেন্ট। যেটি ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্বা জ্ঞাপনে স্থাপন করা হয়। বই প্রেমীরা বই মেলায় অংশ নিতে এলে মিনারেও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
মেলা কে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার চেষ্টার ত্রুটি না থাকলেও আছে দর্শনার্থীদের অভিযোগ। মেলায় আগত আরেক প্রবীন দর্শনার্থী ক্ষোভ নিয়ে বলেন, মেলা প্রাঙ্গণ বৃষ্টির পানির কারণে প্রতিকূলতা সৃষ্টি হয়েছে। মেলার স্বাভাবিক গতির অনন্তায় হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প ভেন্যু অর্থাৎ ইনডোরে মেলা আয়োজন করলে মানুষের সমাগম আরো বেশী হবে বলে আমরা্ মনে করি। কর্তৃপক্ষ এটা ভাবা উচিত।
তবে আয়োজকদের মতে ভাষার মাসকে কেন্দ্র করে সিডনির একুশে বই মেলার হয়। এখানেই আন্তজার্তিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ, তাই মেলা এই প্রাঙ্গনেই প্রাধ্যান্যতা পায়। এবারে বিধি নিষেধ মানতে গিয়ে মেলাটি মার্চ মাসে আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় আগতদের একুশে একাডেমীর পক্ষথেকে শুভেচ্ছা জানান সংগঠনটির সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল মতিন ।
উল্লেখ্য প্রবাসে মেলা আয়োজন চ্যালেজিং হলেও হাটি হাটি পা পা করে একুশের বই মেলা প্রায় দুই যুগে পদাপর্ন করলো। ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করলেও ২০০১ সাল থেকে একুশে বই মেলা হিসেবে এই মেলাটি হয়ে আসছে। শুরুর দিকে মাত্র পাচজন মানুষ ও একটি প্রকাশনা দিয়ে মেলাটি যাত্রা শুরু করলেও এখন মেলায় অংশগ্রহণকারী লেখক পাঠকের সংখ্যা বহুগুনে বেড়ে এটি বাঙ্গালীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।