কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চার’শ বছরের পুরনো সাতক্ষীরার শ্যাম সুন্দর মন্দির।
আব্দুর রহিম/সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি:
প্রায় চার’শ বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা শ্যামসুন্দর মন্দির। সাতক্ষীরা সদর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার ও কলারোয়া উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সোনাবাড়ীয়া গ্রামে এ মন্দিরটির অবস্থান। নবরত্ন মন্দির, দুর্গামন্দির ও শিবমন্দির এই ৩টির সম্মিলনে গড়ে উঠে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি।
স্থনীয়ভাবে একে সোনাবাড়ীয়া মঠ বা মঠবাড়ি নামেও ডাকা হয়। প্রায় ৬০ ফুট উঁচু টেরাকোটা ফলক খচিত এ মন্দিরটি দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হয়ে।
মন্দিরটির ইতিহাস নিয়ে দুরকম তথ্য পাওয়া যায়। কেউ কেউ মনে করেন, ৪০০ বছরের বেশ কিছু পূর্বে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বুদ্ধদেবের শিষ্যরা এই মন্দিরটি তৈরি করেন। এরপর ধর্ম প্রচারে ব্যর্থ হয়ে প্রচারকগণ যখন চলে যান তখন মন্দিরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। পরে ১৭৬৭ সাল থেকে তৎকালীন জমিদার সেটিকে ব্যবহার শুরু করেন। তারা ছিলেন মূলত দুর্গাপ্রিয় চৌধুরীর জমিদারের পূর্বপুরুষ। আবার কেউ মনে করেন, বাংলা ১২০৮ সালে রানী রাশমনি এই মঠ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। সোনাবাড়িয়ার এক বেলগাছ তলায় রাতের আঁধারে মাঠি ফুঁড়ে বের হয় একাধিক শিব মূর্তি।রানী রাশমনি স্বপ্নে আদিষ্ঠ হয়ে স্নানের সময় ভাসমান পাথরের শিবমূর্তি উদ্ধার করে এ মঠ মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরের আশেপাশে আরও প্রায় ৯টি মন্দির ছিল বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। জনশ্রুতি অনুসারে, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও এ মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেছিলেন।
তিনতলা বিশিষ্ঠ পিরামিড অবয়বের এই মন্দিরটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট চওড়া। ছোট ছোট পাতলা ইট ও টেরাকোটা ফলক দিয়ে মন্দিরটি তৈরি করা হয়। এর সবখানেই শোভা পাচ্ছে নজরকাড়া কারুকাজ। আম, কাঠাল, নারিকেল, মেহগনি, সেগুন ও দেবদারু গাছের বাগান দিয়ে ঘেরা ১৫ একর জমির ওপর এ মন্দিরটি অবস্থিত। পূর্বে এই মন্দিরের পূর্ব দিকে স্থাপন করা ছিল কষ্টি পাথরের তৈরি ১২টি শিবলিঙ্গ। এছাড়াও দোতালায় ছিল স্বর্ণের তৈরি রাধ-কৃষ্ণ মূর্তি। মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও সুড়কি ব্যবহারের মাধ্যমে। শ্যাম সুন্দর মন্দিরের পাশে আরও দুটি মন্দির রয়েছে যেগুলো দুর্গা ও শিবের পূজা করার জন্য ব্যবহার করা হত। মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি বড় পুকুর। পুকুরের পাশ দিয়ে ঢুকতেই ছিল বড় তোরণ। তার ওপর ছিল নহবতখানা।
কালের স্রোতে জৌলুস হারিয়েছে প্রাচীন স্থাপত্যের এই নিদর্শনটি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মন্দিরটির অবস্থা এখন জরাজীর্ণ। ঐতিহাসিক মঠ মন্দিরটি এখনই সংস্কার করা না হলে এর জরাজীর্ণ অবশিষ্ট অংশটুকুও বিলীন হয়ে যাবে।