শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার।।
বিজয় দিবসসহ তিনদিনের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে আড়াই লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাও ভালো হয়েছে। অনেকদিন পর পর্যটক সমাগম হওয়ায় আনন্দিত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকাল থেকে কক্সবাজার ছাড়ঁতে শুরু করেছে বেশির ভাগ পর্যটক।
এরআগে শুক্রবার রাতেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ছাঁড়েন পর্যটকবাহি অসংখ্য বাস।
এদিকে, সড়কপথের পাশাপাশি আকাশপথে আসা–যাওয়ায়ও পর্যটকদের আগ্রহ বেড়েছে। এ জন্য ইউএস–বাংলা, নভোএয়ার যাত্রীদের জন্য প্যাকেজ ছেড়েছে। তারা কক্সবাজার, দৈনিক একাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এসব ফ্লাইটে সিট খালি থাকে না বলে জানা গেছে। শনিবারও সড়ক এবং আকাশ পথে কক্সবাজার ছেড়েছে অনেক পর্যটক।
বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে পাঁচ লাখের বেশি পর্যটক উপস্থিতির আশা করেছিলেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাদের আশার কমতি হয়নি।
এ তিনদিনে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
পর্যটক সমাগম বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজারের প্রায় সাড়ে শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও রেস্তোরাঁ এবং পরিবহন মিলিয়ে সব ব্যবসায়ই যেন প্রাণ ফিরে পায়।
তবে,কক্সবাজারে পর্যটক আগমনকে পূঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে হোটেল মোটেল, খাবার হোটেল ও পরিবহণ সেক্টরে গলাকাটা বাণিজ্য করছে বলে পর্যটকদের অভিযোগের শেষ নেই। বেশকিছু হোটেল মোটেল ও কটেজে অভিযানও চালায় প্রশাসন।
শনিবার সকালে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সৈকতে পর্যটকরা যে যার মতো আনন্দ হৈ-হুল্লোড়ে ব্যস্ত। সমুদ্র স্নান, বালিয়াড়িতে দৌড়ঝাঁপসহ আনন্দমুখর সময় পার করছেন তারা। সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী ও কবিতা চত্বর পয়েন্টে দেড় থেকে লক্ষাধিক মতো পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
তবে, যে যার মতো করে সৈকতে ঘোরাফেরা করছেন, দূরত্ব মানা হচ্ছে না।
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতেছিল। এ ছাড়াও মেরিন ড্রাইভ সড়ক, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানীর পাথুরে সৈকত, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধ বিহার, ডুলাহাজার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কসহ জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকদের ভিড় ছিল। প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে গেছেন বিপুল সংখ্যক পর্যটক। তবে এসব পর্যটন কেন্দ্রে করোনা সংক্রমণ রোধে ট্যুরিস্টসহ প্রশাসন নানা ব্যবস্থা ও উদ্যোগের কথা জানালেও কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ পর্যটকদেরই মুখে মাস্ক নেই। মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরুত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনস।
হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে অতিরিক্ত ছুটিতে কক্সবাজারে তিনদিনে আড়াই লাখের অধিক পর্যটক এসেছেন। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ব্যবসাও ভালো করেছে। এই তিনদিনে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।
তিনি বলেন, পর্যটক সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে হোটেল মোটেল মালিক সমিতি ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থানে রয়েছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় রয়েছে পর্যটনস্পটগুলো।
সৈকতে নিয়োজিত
সী সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, ‘ঢেউয়ের তালে পর্যটকরা দাপিয়ে বেড়ান। অনেকে বিপৎসীমার বাইরেও চলে যান। তাদের ফিরিয়ে আনতে এবং নিরাপদ থাকতে আমরা সবসময় সতর্ক করি।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় সর্তকাবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পর্যটকদের অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানি রোধে, পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও পুলিশের নারী সদস্যরা সৈকতে ঘুরছেন।