পাবনার ভাঙ্গুড়ায় রাহুল বিলে বাউত উৎসব।
বাকী বিল্লাহ/(সাঁথিয়া-বেড়া) পাবনা প্রতিনিধি:
কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকালে আকাশ ফর্সা হতে না হতেই সারি বেঁধে রওনা হলেন বিলের দিকে। কারও কাঁধে পলো, কারও কাঁধে বা ঠেলা জাল। মাছ ধরার জন্য আরও অনেক সরঞ্জাম রয়েছে অন্যদের হাতে।
নানা বয়সী মানুষের এই হল্লা করে যাত্রা শেষ হলো ভাঙ্গুড়া উপজেলার রাহুল বিলে। তারপর যে যার মতো করে নেমে গেলেন বিলের পানিতে মাছ ধরার জন্য। আঞ্চলিক ভাষায় দল বেঁধে এই মাছ ধরার নাম বাউত উৎসব।
চলনবিল এলাকায় বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে নিম্নাঞ্চলের খাস বা সরকারি জলাভূমিতে বিভিন্ন এলাকার সৌখিন মৎস শিকারিরা দলবেঁধে পলো,ছোট জাল, ধর্মখড়াসহ মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে এক সঙ্গে পানিতে নামেন। এটিকে পলো উৎসব বা বাউত উৎসবও বলে থাকেন।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নে রাহুল বিলে সৌখিন মৎস শিকারীদের মিলন মেলা হয়েছে। মাছ ধরা পড়ুক বা না পড়ুক সবাই মিলে প্রতি বছর এই দিনে মাছ ধরতে আসার মজাই যেন অন্য রকম।
রাহুল বিল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুধু পাবনাই নয় আশে পাশের নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল থেকেও ছোট বড় যান বাস, নসিমন, অটোভ্যান, ভটভটি করে কুয়াশা ঢাকা শীতের ভোর বেলায় এই বিল পারে আসতে থাকে।
মাছ ধরার সময় বিভিন্ন স্লোগান শোনা যায়। এবং কেউ যদি মাছ পায় তাকে সবাই মিলে আরও উৎসাহ দিতে থাকে। তবে প্রায় সবার মুখেই ছিলো মাছ ধরতে আসতে পারার আনন্দটা।
মাছধরাকে কেন্দ্র করে বিল পাড়ে চা বিস্কিটের দোকান নিয়েও বসেছে অনেকে। মাছ ধরতে নেমে কেউ কেউ শোল, বোয়াল, রুই এবং গজার মাছও পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ মাছ না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়েছে। তবে মাছ না পাওয়ার বেদনার চেয়ে অংশ গ্রহণ করতে পেরেই যেন মহাখুশি।
এসময় ছোট বড় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে রাহুল বিলের কানায় কানায় ভরে ওঠে।
আরও জানা যায়, কয়েক হাজার একর জমি নিয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত পার্শ্ববর্তী চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের কিছু অংশ মিলিয়ে রাহুল বিল।
বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর কয়েক শত একর জমিতে বিভিন্ন ছোট বড় গভীর অংশে পানি থাকে। সেখানে দেশীয় প্রজাতির মাছ যেমন, শোল, বোয়াল, গজার, জিওল (শিং মাছ) সহ বিভিন্ন মাছ আটকে থাকে।
প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন জেলা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক এবং মোবাইলের মাধ্যমে খবর পেয়ে এই বিলে মাছ ধরার জন্য শতশত মানুষ হাজির হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মৎস্য শিকারির সংখ্যাও কমতে থাকে।
পঞ্চাশোর্ধ আলম হোসেন এসেছেন নাটোর থেকে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রাহুল বিলে মাছ ধরার জন্য প্রতি বছর অপেক্ষায় থাকি। লোকমুখে খবর পেয়ে মাছ ধরতে এসেছি।
টাঙ্গাইলের বাছের উদ্দিন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মাছ ধরার খবর পেয়ে তারা একাধিক বাস রিজার্ভ করে কয়েকশো সৌখিন মৎস শিকারি মাছ ধরার জন্য এসেছেন।