শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার।।
টানা ভারী বৃষ্টিপাতে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। লঘুচাপের কারণে সাগরে জোয়ারের পানি ৩ থেকে ৪ সেন্টমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় ১১৭ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস।
বুধবার (২৮ জুলাই) ভোর থেকে টানা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। সঙ্গে বয়ে যাচ্ছে বাতাস। এর ফলে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা, পিএমখালী, চৌফলদন্ডী, ঈদগাঁও, ভারুয়াখালী, পোকখালী গোমাতলী, ইসলামপুর, ইসলানাবাদ, রামু, পেকুয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, উখিয়ার জালিয়াপাড়া, ইনানী, টেকনাফের সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াইক্যং, মহেশখালী, কুতুবদিয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে জনদূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
মহেশখালীতে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে দোকানপাট। রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ। উপজেলার হোয়ানক, কালারমারছড়া শাপলাপুর ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজির পাড়া ও হরিয়ার ছড়া গ্রামে। দুটি গ্রামেই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
কক্সবাজারের ঈদগাঁও নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট। তম্মধ্যে জালালাবাদের মনজুর মৌলভীর দোকান সংলগ্ন পয়েন্ট, মিয়াজীপাড়া পয়েন্ট, ছাতিপাড়া পয়েন্ট, ইসলামাবাদ ইউনিয়নের গার্লস স্কুল পয়েন্ট, ওয়াহেদের পাড়া পয়েন্ট, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভোমরিয়াঘোনা পয়েন্ট অতি ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে।
বৃষ্টির পানি এবং ঈদগাঁও হাইস্কুল পয়েন্ট থেকে ঈদগাঁও নদীর পানি অনুপ্রবেশ করে ঈদগাঁও বাজারের ডিসিসড়কসহ অলিগলিসমুহ কোমরসমান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাজারের কয়েকশ ব্যবসা প্রতিষ্টান ও পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকায়। ইতোমধ্যেই প্লাবিত হয়ে পড়েছে জালালাবাদ ইউনিয়নের মাছুয়াপাড়া, বাজারপাড়া, বাঁশঘাটা, তেলীপাড়া, দঃ এবং পূর্বলরাবাগ, ছাতিপাড়া, মিয়াজীপাড়া, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভোমরিয়াঘোনা, মাইজপাড়া, কানিয়াছড়া, জাগিরপাড়া, সাতঘরিয়াপাড়া, দরগাহপাড়া, লালসরিপাড়া, ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ইউছুফেরখীল, ওয়াহেদের পাড়া, খোদাইবাড়ী, রাবার ড্যাম, চরপাড়া, পোকখালী ইউনিয়নের মধ্যম পোকখালী এলাকার নাছির মৌলভীর বাড়ী সংলগ্ন বেড়িবাঁধের ২শ ফুটেরও অধিক অংশ ভেঙ্গে গিয়ে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ।
এছাড়া ওই ইউনিয়নের পরিষদ সংলগ্ন প্রধান সড়কটিও ২/৩ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে।
নব গঠিত ঈদগাঁও উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু ) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল। বেড়িবাঁধ মেরামত ও নদী ভাঙ্গন রোধ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়ার আহবান জানান তিনি।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে,
উপজেলাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া দপ্তরের সহকারি আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার উপকূলে যে সমস্ত নৌযান চলাচল করে সেসব নৌযানকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদে থেকে মাছ শিকারের কথা বলা হচ্ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১১৭ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
প্রসংগত, কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাতে গত দুইদিনে শরণার্থী শিবিরসহ উখিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালীতে পাহাড় ধস, পানিতে ভেসে গিয়ে আর মাটির দেয়াল চাপায় ১৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে টেকনাফে ৬ জন, মহেশখালীতে ২ জন ও রোহিঙ্গা শিবিরে ৬ জন রয়েছে।